চার লাখ টাকার ব্যবস্থা হলেই হলেই জীবন প্রদীপ নিভবে না মোটরসাইকেল চালক মহসিন মিয়ার। তার জিহ্বায় একটি ফোঁড়া থেকে জন্ম নেয় মরণব্যাধী ক্যানসার। নিজের সহায় সম্বল ও আয় রোজগারের বাহন মোটর সাইকেল বিক্রি করে দফায় দফায় অপারেশন করেও ফের জন্ম নিচ্ছে ক্যানসারের উপাদান থাকা ফোঁড়াটি।
সুনামগঞ্জ পৌরশহরের পশ্চিম হাজিপাড়ার বাসিন্দা মহসিন মিয়া পেশায় একজন যাত্রী বহনকারী মোটরসাইকেল চালক। নিজে একটি মোটরসাইকেল চালিয়ে ও দুটি মোটরসাইকেল থেকে পাওয়া ভাড়ার আয় দিয়ে তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে সুন্দরভাবেই চলছিল তার ছোট সংসার।
হঠাৎ করে জিহ্বায় ছোট একটি টিউমার তার জীবনে ঝড় হয়ে এলো, এতে সাজানো গোছানো সংসার ও ছেলে-মেয়েদের ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়লো। শুরুর দিকে মহসিনের জিহবার ছোট ফোঁড়া সুনামগঞ্জের ডাক্তারের পরামর্শে অপারেশন করে অপসারণ করা হয়। এরপর একমাসের মধ্যে আবারও জিহ্বায় নতুন করে আরেকটি টিউমার হয়। সুনামগঞ্জের ডাক্তাদের পরামর্শে সিলেট গিয়ে চিকিৎসা করাতে শুরু করেন তিনি। পরে সিলেটে আরেক দফায় জিহবায় অপারেশন করে- টিউমার অপসারণ করে ওষুধ খাওয়া শুরু করেন মহসিন। সিলেটে পরীক্ষায় ধরা পরে টিউমারে ক্যানসারের উপাদান রয়েছে।
সিলেটে দ্বিতীয় বার অপারেশন করার পর আবারও জিহ্বায় নতুন করে টিউমার হয়। পরে ময়মনসিংহে ডাক্তার দেখালে টিউমারটি গলায় ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানানো হয়। এর চিকিৎসা ঢাকায় করাতে হবে জানান ডাক্তার। চিকিৎসকের পরামর্শে ঢাকায় তৃতীয়বার জিহ্বায় ও গলায় অপারেশন করে টিউমার অপারেশ করানো হয়।
মোট তিন দফায় অপারেশন ও চিকিৎসায় প্রায় নয় লাখ টাকা খরচ হয়েছে তার। নিজের উপার্জনের তিনটি বাইক ও জায়গা বিক্রয় করে এই চিকিৎসা করান তিনি। এখন চার সপ্তাহে চারটি কেমো থেরাপি ও ৩০ টির অধিক রেডিও থেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন তার শরীরে। এতে প্রয়োজন প্রায় চার লাখ টাকা।
অসুস্থ মহসিন মিয়া বলেন, আমার যা কিছু আছে বিক্রয় করে দিয়ে এতোদিন চিকিৎসার করিয়েছি। তিনটি মোটরসাইকেলের আয় দিয়ে সংসার চলতো। এখন ধারদেনা করে সংসারের খরচ চালাতে হচ্ছে। ক্যামো থেরাপি ও রেপিও থেরাপির জন্য টার লাখ টাকা প্রয়োজন। বিক্রয় করার মত এখন আর কিছুই নেই আমার, আমি বাঁচতে চাই।
ব্যয় বহুল ক্যানসারের চিকিৎসায় নি:স্ব মহসিন মিয়া। এমতাবস্থায় স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকা ভাড়া বাসার ৮ মাস বাকি পড়েছে। পরিবারের নিত্যদিনের আহার জোগানোই যেখানে কঠিন, সেখানে মরণব্যাধি ক্যান্সারের মত রোগের চিকিৎসা ব্যয় বহন করা তার পক্ষে রীতিমত কল্পনারও বাইরে। বর্তমানে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না মহসিন মিয়া। পরিবারের ব্যয় যোগান সহ চিকিৎসার খরচ মেটানোটা এখন তার কাছে দুঃস্বপ্নের মতই মনে হচ্ছে। তাই দেশবাসির কাছে সহযোগিতার আহবান জানিয়েছেন মহসিনের স্ত্রী রুজিনা বেগমের।
তিনি বলেন, মাত্র চার লাখ টাকার জোগাড় হলে বেঁচে যাবেন আমার স্বামী। আমার তিন ছেলে-মেয়ের ও পরিবারের খরচ চালাতেই হিমসিম খেতে হচ্ছে। সবাই সহযোগিতা করলেই আমার সন্তানরা তাঁদের বাবাকে বাঁচাতে পারবে।
পশ্চিম হাজিপাড়ার বাসিন্দা আব্দুস শহীদ বলেন, ‘চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে সবকিছুই বিক্রয় করেছে মহসিন। এখন আর তার কিছুই নেই। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে সে সুস্থ হবে। আবারও নতুন করে পরিবারের হাল ধরতে পারবে।
তেঘরিয়ার বাসিন্দা গণমাধ্যম কর্মী সোহানুর রহমান সোহান বললেন, মহসিন ভাই আমাদের এলাকার খুবই ভদ্র ও বিনয়ী একজন মানুষ। পরিশ্রম করেই পরিবারের হাল ধরেছিলেন তিনি। হঠাৎ শরীরে এমন রোগ বাসা বেঁধেছে, চিকিৎসা করাতে গিয়ে সহায়-সম্বল সব বিক্রয় করে দিয়েছেন তিনি। তিনটি অপারেশন হয়েছে। আর কিছু টাকা জোগাড় হলেই সুস্থ হয়ে যাবেন তিনি। আমরা সবাই এগিয়ে এলে মহসিন ভাইকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে পারবো।
সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে কর্মরত নাক কান গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মো. আখতার-উজ-জামান আকন্দ বললেন, সুনামগঞ্জে প্রথমদিকে চিকিৎসা করানোর সময়ই আমি লিখে দিয়েছিলাম মহসিন ক্যান্সারে আক্রান্ত, তাকে সেভাবেই চিকিৎসা নিতে হবে।