বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৬ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাতকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে চলমান নির্মাণ কাজ অব্যাহত

 

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাস্তার ওপর গেইট ও দেয়াল নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই আদালত অবমাননার ঘটনায় ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খানের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে। আদালতের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্মাণকাজ চলমান থাকায় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠায় গড়গাঁও গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালারুকা ইউনিয়নের মাহমদপুর মৌজার জেএল নং ২৬৩, খতিয়ান নং ১১১, দাগ নং ৭২৫-এর সাড়ে ৩১ শতক ভূমির মালিক মৃত মদরিছ আলীর তিন ছেলে—শফিক মিয়া, রফিক মিয়া ও মাসুক মিয়া। ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত এ জমি দখলের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে একই গ্রামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আশিকুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান ও হাসানুর রহমান পুষ্পের নেতৃত্বাধীন একটি প্রভাবশালী চক্র। সম্প্রতি জমির একাংশে ভুক্তভোগী আটটি পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় গেইট ও দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ভুক্তভোগী শফিক মিয়া বাদী হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি বিবিধ মোকদ্দমা দায়ের করেন। শুনানি শেষে আদালত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ওই জমিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদানের আদেশ দেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাতক থানার এসআই মহিউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে আদালতের নোটিশ পৌঁছে দেন। কিন্তু নোটিশ পাওয়ার রও প্রতিপক্ষ আদালতের আদেশকে অগ্রাহ্য করে গত তিন দিন ধরে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা সরাসরি আদালত অবমাননার সামিল। প্রতিপক্ষের দাবি, তারা ৭২১ ও ৭২২ দাগে কাজ করছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা অবস্থায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং অভিযুক্ত একপক্ষের সঙ্গে ওসির ঘনিষ্ঠতা জনমনে গভীর হতাশা ও প্রতারণার অনুভূতি তৈরি করেছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান , ওসি আইন প্রয়োগে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং তিনি অভিযুক্তদের হয়ে কাজ করছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় ওসি শফিকুল ইসলাম খান এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত ওসি (তদন্ত) রঞ্জন কুমার ঘোষ অভিযুক্ত আরিফুর রহমানদের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত খাচ্ছেন। এই ছবি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভূমি সংক্রান্ত এই বিরোধের জেরে তাদের বিরুদ্ধেই উল্টো চাঁদাবাজি ও ফৌজদারি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে প্রতিপক্ষ। বিষয়টি একাধিকবার থানা পুলিশকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি ১৮ সেপ্টেম্বর তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে গেলেও তা গ্রহণে গড়িমসি করে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় নি বলে অভিযোগ তাদের। তবে পুলিশের দাবি, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাতক থানার এসআই মহিউদ্দিন জানান, “উভয় পক্ষকে নোটিশ দেওয়ার পর আমি খবর পেয়েছি যে সেখানে নির্মাণকাজ চলছে। বিষয়টি আমি ওসি স্যারকে জানিয়েছি।” তবে সেই ‘জানানো’র পর কেন কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান দাওয়াতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “এটি একটি সামাজিক সৌজন্যতা ছিল এবং এর সঙ্গে চলমান বিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো পক্ষকে অন্যায় সুবিধা দেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

ছাতকে আদালতের নিষেধাজ্ঞা ভেঙে চলমান নির্মাণ কাজ অব্যাহত

প্রকাশের সময় : ১০:৫৪:৪১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

 

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাস্তার ওপর গেইট ও দেয়াল নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। এই আদালত অবমাননার ঘটনায় ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম খানের ভূমিকা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের গড়গাঁও গ্রামে। আদালতের সুস্পষ্ট নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও নির্মাণকাজ চলমান থাকায় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠায় গড়গাঁও গ্রামে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এতে উপজেলা জুড়ে আলোচনা সমালোচনা ঝড় বইছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কালারুকা ইউনিয়নের মাহমদপুর মৌজার জেএল নং ২৬৩, খতিয়ান নং ১১১, দাগ নং ৭২৫-এর সাড়ে ৩১ শতক ভূমির মালিক মৃত মদরিছ আলীর তিন ছেলে—শফিক মিয়া, রফিক মিয়া ও মাসুক মিয়া। ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত এ জমি দখলের লক্ষ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে আসছে একই গ্রামের সাবেক কেন্দ্রীয় যুবদল নেতা আশিকুর রহমানের ছেলে আরিফুর রহমান ও হাসানুর রহমান পুষ্পের নেতৃত্বাধীন একটি প্রভাবশালী চক্র। সম্প্রতি জমির একাংশে ভুক্তভোগী আটটি পরিবারের চলাচলের একমাত্র রাস্তায় গেইট ও দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নিলে ভুক্তভোগী শফিক মিয়া বাদী হয়ে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি বিবিধ মোকদ্দমা দায়ের করেন। শুনানি শেষে আদালত শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে ওই জমিতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারায় নিষেধাজ্ঞা জারি করে উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদানের আদেশ দেন। ১৭ সেপ্টেম্বর ছাতক থানার এসআই মহিউদ্দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষকে আদালতের নোটিশ পৌঁছে দেন। কিন্তু নোটিশ পাওয়ার রও প্রতিপক্ষ আদালতের আদেশকে অগ্রাহ্য করে গত তিন দিন ধরে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাচ্ছে, যা সরাসরি আদালত অবমাননার সামিল। প্রতিপক্ষের দাবি, তারা ৭২১ ও ৭২২ দাগে কাজ করছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকা অবস্থায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা এবং অভিযুক্ত একপক্ষের সঙ্গে ওসির ঘনিষ্ঠতা জনমনে গভীর হতাশা ও প্রতারণার অনুভূতি তৈরি করেছে।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা জানান , ওসি আইন প্রয়োগে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন এবং তিনি অভিযুক্তদের হয়ে কাজ করছেন। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ছবি ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা যায় ওসি শফিকুল ইসলাম খান এবং পুলিশের পোশাক পরিহিত ওসি (তদন্ত) রঞ্জন কুমার ঘোষ অভিযুক্ত আরিফুর রহমানদের বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত খাচ্ছেন। এই ছবি পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে এবং স্থানীয়দের মধ্যে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভূমি সংক্রান্ত এই বিরোধের জেরে তাদের বিরুদ্ধেই উল্টো চাঁদাবাজি ও ফৌজদারি মামলা দিয়ে হয়রানি করছে প্রতিপক্ষ। বিষয়টি একাধিকবার থানা পুলিশকে জানানো হলেও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি ১৮ সেপ্টেম্বর তারা থানায় লিখিত অভিযোগ দাখিল করতে গেলেও তা গ্রহণে গড়িমসি করে অভিযোগ গ্রহণ করা হয় নি বলে অভিযোগ তাদের। তবে পুলিশের দাবি, অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ছাতক থানার এসআই মহিউদ্দিন জানান, “উভয় পক্ষকে নোটিশ দেওয়ার পর আমি খবর পেয়েছি যে সেখানে নির্মাণকাজ চলছে। বিষয়টি আমি ওসি স্যারকে জানিয়েছি।” তবে সেই ‘জানানো’র পর কেন কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, সে প্রশ্নের কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ছাতক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শফিকুল ইসলাম খান দাওয়াতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “এটি একটি সামাজিক সৌজন্যতা ছিল এবং এর সঙ্গে চলমান বিরোধের কোনো সম্পর্ক নেই। পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। কোনো পক্ষকে অন্যায় সুবিধা দেওয়ার অভিযোগটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”