বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাতকে গাইনি ডাক্তার ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের অভিযোগ: বিপাকে সাধারণ রোগীরা

  • ভিশন ডেস্ক ::
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ৪৫

 

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি ডাক্তার সংকটের সুযোগ নিয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং ছাতক ট্রাফিক পয়েন্টের নীপা ফার্মেসির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের প্রধান শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা, যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, দুর্ব্যবহার, টিকিট বাণিজ্য, ভেজাল ওষুধ বিক্রি এবং জোরপূর্বক ওষুধ কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি ডাক্তার সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং নীপা ফার্মেসি মিলে এই সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা সপ্তাহে তিনদিন নীপা ফার্মেসিতে চেম্বার করেন এবং এ সময় রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে পেশাগত নৈতিকতা লঙ্ঘনের করে তিনি হাসপাতালের শূন্যতার সুযোগ নিয়ে নিজের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। নীপা ফার্মেসির বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফার্মেসির কর্মীরা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, টিকিট বাণিজ্য চালাচ্ছেন, ভেজাল ওষুধ বিক্রি করছেন এবং জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে ওষুধ কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। সানী দাস, কাওসার, শওকত আহমেদ, মো. লিটন, তম্নয় দেব, সিন্টু দাস, দুলাল মন্ডল ও আব্দুল হুক সাফওয়ানসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন যে সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে এবং প্রতিবাদ করলে হুমকির শিকার হতে হয়েছে। ফার্মেসির মালিকের ছেলে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে, যা তাদের বেপরোয়া আচরণের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই পুরো ঘটনায় ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং নীপা ফার্মেসি উভয়কেই সমানভাবে দায়ী করা হচ্ছে। চিকিৎসকের নৈতিক স্খলন এবং ফার্মেসির আর্থিক লোভ ও ক্ষমতার দাপট—এই দুইয়ের সমন্বয়েই ছাতকের স্বাস্থ্যসেবায় এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার কাছে যখন যে বিষয়ে রোগী আসে, রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী আমার যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন আমি ঠিক সেভাবেই তাদের সাথে ব্যবহার করি। কেউ যদি মনে করে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিস্টার্ব করলে বা ফার্মেসি কর্তৃপক্ষকে ডিস্টার্ব করলে আমি অন্য জায়গায় চেম্বার করবো তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমি অন্য কোথাও চেম্বার করবো না। আমার ছাতকে চেম্বার করার কোনো প্রয়োজন নেই। ছাতকে চেম্বার করতে আমার কষ্ট হয়। নিজের এলাকাকে ভালোবাসি বলে ছাতকে চেম্বার করতে আসি। ফার্মেসির মালিক সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না, ফার্মেসীর মালিক ভালো বলতে পারবেন।”
একাধিকবার চেষ্টা করেও নীপা ফার্মেসির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ফার্মেসিতে কর্মরত তুষার নামে এক ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ম্যাডামের কিছু আত্মীয়-স্বজন ও দূর থেকে আসা রোগীদের জন্য উপরের কিছু সিরিয়াল খালি রাখতে হয়। যে বা যারা এটা যদি টিকেট সিন্ডিকেট মনে করেন তাহলে টিকেট সিন্ডিকেটই। আর যে বা যারা টাকার বিনিময়ে টিকেট সিন্ডিকেটের কথা বলে তাদেরকে ফার্মেসীতে নিয়ে আইসেন।”
ছাতক বাজার ফার্মেসি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “২৯ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমার ফার্মেসিতেও ডাক্তার আসেন। কখনও সিরিয়াল বা কোনো বিষয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু, কী কারণে নীপা ফার্মেসিতে বারবার সমস্যা হয় তা সঠিক বলতে পারবো না। ফার্মেসির মালিকের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন জানান, “নীপা ফার্মেসিতে যদি ফাতেমা ম্যাডামকে নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়, এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। অফিস টাইম পরে যদি তিনি চেম্বার করেন এ বিষয়ে আসলে আমার কথা বলার কোনো অধিকার নেই। তার চেম্বার বা ফার্মেসির বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ দিতে পারেন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামও জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্ধুদের সহযোগিতায় পুলিশ কন্সষ্টেবলের সরকারি কোয়ার্টারে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ!

ছাতকে গাইনি ডাক্তার ও ফার্মেসির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেটের অভিযোগ: বিপাকে সাধারণ রোগীরা

প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৩৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

 

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি ডাক্তার সংকটের সুযোগ নিয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং ছাতক ট্রাফিক পয়েন্টের নীপা ফার্মেসির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। এই সিন্ডিকেটের প্রধান শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা, যাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়, দুর্ব্যবহার, টিকিট বাণিজ্য, ভেজাল ওষুধ বিক্রি এবং জোরপূর্বক ওষুধ কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গাইনি ডাক্তার সংকটের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং নীপা ফার্মেসি মিলে এই সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা সপ্তাহে তিনদিন নীপা ফার্মেসিতে চেম্বার করেন এবং এ সময় রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। ডাক্তারের বিরুদ্ধে পেশাগত নৈতিকতা লঙ্ঘনের করে তিনি হাসপাতালের শূন্যতার সুযোগ নিয়ে নিজের একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছেন। নীপা ফার্মেসির বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, ফার্মেসির কর্মীরা রোগীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন, টিকিট বাণিজ্য চালাচ্ছেন, ভেজাল ওষুধ বিক্রি করছেন এবং জোরপূর্বক তাদের কাছ থেকে ওষুধ কেনার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। সানী দাস, কাওসার, শওকত আহমেদ, মো. লিটন, তম্নয় দেব, সিন্টু দাস, দুলাল মন্ডল ও আব্দুল হুক সাফওয়ানসহ একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছেন যে সিরিয়াল এগিয়ে দেওয়ার জন্য তাদের কাছ থেকে টাকা চাওয়া হয়েছে এবং প্রতিবাদ করলে হুমকির শিকার হতে হয়েছে। ফার্মেসির মালিকের ছেলে একজন সিনিয়র সহকারী সচিব হওয়ায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে, যা তাদের বেপরোয়া আচরণের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এই পুরো ঘটনায় ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা এবং নীপা ফার্মেসি উভয়কেই সমানভাবে দায়ী করা হচ্ছে। চিকিৎসকের নৈতিক স্খলন এবং ফার্মেসির আর্থিক লোভ ও ক্ষমতার দাপট—এই দুইয়ের সমন্বয়েই ছাতকের স্বাস্থ্যসেবায় এমন করুণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে ডা. ফাতেমাতুজ জোহরা তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “আমার কাছে যখন যে বিষয়ে রোগী আসে, রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী আমার যেভাবে ব্যবহার করা প্রয়োজন আমি ঠিক সেভাবেই তাদের সাথে ব্যবহার করি। কেউ যদি মনে করে আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিস্টার্ব করলে বা ফার্মেসি কর্তৃপক্ষকে ডিস্টার্ব করলে আমি অন্য জায়গায় চেম্বার করবো তাহলে তারা ভুল ভাবছে। আমি অন্য কোথাও চেম্বার করবো না। আমার ছাতকে চেম্বার করার কোনো প্রয়োজন নেই। ছাতকে চেম্বার করতে আমার কষ্ট হয়। নিজের এলাকাকে ভালোবাসি বলে ছাতকে চেম্বার করতে আসি। ফার্মেসির মালিক সিরিয়াল নিয়ন্ত্রণ করেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না, ফার্মেসীর মালিক ভালো বলতে পারবেন।”
একাধিকবার চেষ্টা করেও নীপা ফার্মেসির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। তবে ফার্মেসিতে কর্মরত তুষার নামে এক ব্যক্তি ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “ম্যাডামের কিছু আত্মীয়-স্বজন ও দূর থেকে আসা রোগীদের জন্য উপরের কিছু সিরিয়াল খালি রাখতে হয়। যে বা যারা এটা যদি টিকেট সিন্ডিকেট মনে করেন তাহলে টিকেট সিন্ডিকেটই। আর যে বা যারা টাকার বিনিময়ে টিকেট সিন্ডিকেটের কথা বলে তাদেরকে ফার্মেসীতে নিয়ে আইসেন।”
ছাতক বাজার ফার্মেসি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক লিটন দাস এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “২৯ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছি। আমার ফার্মেসিতেও ডাক্তার আসেন। কখনও সিরিয়াল বা কোনো বিষয়ে সমস্যা হয়নি। কিন্তু, কী কারণে নীপা ফার্মেসিতে বারবার সমস্যা হয় তা সঠিক বলতে পারবো না। ফার্মেসির মালিকের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করবো।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুসরাত আরেফিন জানান, “নীপা ফার্মেসিতে যদি ফাতেমা ম্যাডামকে নিয়ে সমস্যা দেখা দেয়, এটি তার একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। অফিস টাইম পরে যদি তিনি চেম্বার করেন এ বিষয়ে আসলে আমার কথা বলার কোনো অধিকার নেই। তার চেম্বার বা ফার্মেসির বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকলে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ দিতে পারেন।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামও জানিয়েছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।