Sylhet ০২:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ছাতকে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য মনোসামাজিক কর্মশালা সম্পন্ন

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভা কর্তৃক জিইএসাইএপি (GESIAP) প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি যুগান্তকারী মনোসামাজিক কাউন্সেলিং ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত শনিবার ও রবিবার (২১ ও ২২ জুন) পৌরসভা হল রুমে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় ১৫ জন তৃতীয় লিঙ্গধারী অংশ নেন, যা সমাজে তাদের অন্তর্ভুক্তি ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ছাতক পৌরসভার এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ অন্যান্য স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে, যা দেশে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এক নতুন ধারার সূচনা করবে। দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে, যাদেরকে হিজড়া নামে অভিহিত করা হয়। তারা সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমন প্রেক্ষাপটে ছাতক পৌরসভার এই উদ্যোগ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি কেবল একটি কর্মশালা ছিল না, বরং তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কর্মশালাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতি সমাজে বিদ্যমান অবহেলা ও বৈষম্য দূর করা। কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী জনাব মো. রফিকুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান আকন্দ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার জনাব মো. সাইদুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান এবং পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শরদিন্দু রায়। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীরা মনোসামাজিক সহায়তা, আইনি অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্পর্কে মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করেন।

উল্লেখ্য, সরকার ২০১৩ সালে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ২০১৪ সালে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করেছে। এই কর্মশালায় তাদের এই আইনি অধিকারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে।

কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম তৃতীয় লিঙ্গধারী জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে বলেন, “তৃতীয় লিঙ্গধারীগণ সমাজে অবহেলিত একটি গোষ্ঠী। তাদের সমাজে সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা গেলে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারাও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের অংশ। তিনি আরও বলেন, সরকার তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতেও কাজ করা হচ্ছে। এই ধরনের কর্মশালাগুলো সেই বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণেরই একটি অংশ। সম্প্রতি সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে এই জনগোষ্ঠীর জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার মতো বিভিন্ন কর্মসূচি চালু হয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

ছাতকে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য মনোসামাজিক কর্মশালা সম্পন্ন

প্রকাশের সময় : ০৪:১৩:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫

সুনামগঞ্জের ছাতক পৌরসভা কর্তৃক জিইএসাইএপি (GESIAP) প্রকল্পের আওতায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য একটি যুগান্তকারী মনোসামাজিক কাউন্সেলিং ও সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কর্মশালা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। গত শনিবার ও রবিবার (২১ ও ২২ জুন) পৌরসভা হল রুমে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে আয়োজিত দুই দিনব্যাপী কর্মশালায় ১৫ জন তৃতীয় লিঙ্গধারী অংশ নেন, যা সমাজে তাদের অন্তর্ভুক্তি ও আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ছাতক পৌরসভার এই প্রশংসনীয় উদ্যোগ অন্যান্য স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোর জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে, যা দেশে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে এক নতুন ধারার সূচনা করবে। দীর্ঘকাল ধরে বাংলাদেশে, যাদেরকে হিজড়া নামে অভিহিত করা হয়। তারা সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কর্মসংস্থানসহ মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এমন প্রেক্ষাপটে ছাতক পৌরসভার এই উদ্যোগ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক অন্তর্ভুক্তি এবং আত্মমর্যাদা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এটি কেবল একটি কর্মশালা ছিল না, বরং তাদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে এবং তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ। ওই কর্মশালায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কর্মশালাটির মূল উদ্দেশ্য ছিল তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর প্রতি সমাজে বিদ্যমান অবহেলা ও বৈষম্য দূর করা। কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম, উপজেলা প্রকৌশলী জনাব মো. রফিকুল ইসলাম, অফিসার ইনচার্জ মোখলেছুর রহমান আকন্দ, আবাসিক মেডিকেল অফিসার জনাব মো. সাইদুর রহমান, উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শাহ মো. শফিউর রহমান এবং পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শরদিন্দু রায়। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অংশগ্রহণকারীরা মনোসামাজিক সহায়তা, আইনি অধিকার, স্বাস্থ্যসেবা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সম্পর্কে মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করেন।

উল্লেখ্য, সরকার ২০১৩ সালে তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর লিঙ্গ পরিচয় হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ২০১৪ সালে তাদের ভোটাধিকার প্রদান করেছে। এই কর্মশালায় তাদের এই আইনি অধিকারগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা দেওয়া হয়েছে, যা তাদের ক্ষমতায়নে সহায়ক হবে।

কর্মশালার সমাপনী বক্তব্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মো. তরিকুল ইসলাম তৃতীয় লিঙ্গধারী জনগোষ্ঠীর প্রতি গভীর সংবেদনশীলতা প্রকাশ করে বলেন, “তৃতীয় লিঙ্গধারীগণ সমাজে অবহেলিত একটি গোষ্ঠী। তাদের সমাজে সঠিকভাবে পুনর্বাসন করা গেলে এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারাও সাধারণ মানুষের মতো জীবনযাপন করতে পারবে। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্বের অংশ। তিনি আরও বলেন, সরকার তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তাদের সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতেও কাজ করা হচ্ছে। এই ধরনের কর্মশালাগুলো সেই বৃহত্তর লক্ষ্য পূরণেরই একটি অংশ। সম্প্রতি সরকার ও বেসরকারি পর্যায়ে এই জনগোষ্ঠীর জন্য বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করার মতো বিভিন্ন কর্মসূচি চালু হয়েছে।