লন্ডনে পলাতক থাকা সাবেক এমপি রনজিত চন্দ্র সরকারের অবৈধ ব্যবসার পার্টনার ঘনিষ্ট সহযোগি ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার বিকেলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার কাউকান্দি বাজার থেকে তাহিরপুর থানা পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতার ইউনুছ তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়নের সাদেরখলা গ্রামের প্রয়াত হাজি আব্দুর রহমানের ছেলেে এবং ওই ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান।
মঙ্গলবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) জাকির হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, তাহিরপুর থানায় ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাতে দায়েরকৃত অন্তবর্তীকালীন সরকার পতনের ষড়যন্ত্র ও নাশকতা সংশ্লিস্ট মামলায় তদন্তে সম্পুক্ততা পাওয়ায় ইউনুছ আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তাহিরপুরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন জানান, তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল পদ থেকে ২০২২ সালে পদত্যাগ করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নির্বাচন করেন বিজয়ী হন ইউনুছ আলী।
ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, মধ্যনগর) আসনের তৎকালীন দলীয় এমপি বর্তমানে লন্ডনে পালিয়ে থাকা রনজিত চন্দ্র সরকারের সাথে সিলেটে বসবাসের সুবাধে চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী ব্যাক্তিগত সখ্যতা গড়ে তোলেন বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বেই ।
বিগত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকারকে বিজয়ী করার জন্য নিজ উপজেলা তাহিরপুরে ভোট বাগিয়ে আনতে ভোটারদের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা বিনিয়োগ করেন কয়লা চুনাপাথর আমদানি কারক চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এরপর ইউনুছ আলী বনে যান তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় এমপি রনজিত চন্দ্র সরকারের সব ধরণের অবৈধ ব্যবসার পার্টনার ও ঘনিষ্ট সহযোগি।
২০২৪ সালে জুলাই আগষ্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ার পুর্বে ওই বছরের ১৯ জুলাই সিলেট নগরীর দরগাগেইট এলাকায় ছাত্রজনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনায় আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী, এমপিসহ ৮৬ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।ওই মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলীকে আসামী করা হয়।
২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট সিলেটের অতিরিক্ত চীফ মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেন সিলেট মহানগরীর কাজিটুলা এলাকার মাহবুব হোসাইন। মামলায় ৮৬ জনের নামোল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়।
একই মামলায় অন্যান্য আসামীরা হলেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালও রয়েছেন।
মামলার বাদী সিলেট মহানগরীর কাজিটুলা এলাকার মাহবুব হোসাইন জানান,সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর-জামালগঞ্জ-ধর্মপাশা-মধ্যনগর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লন্ডনে পালিয়ে থাকা রনজিত চন্দ্র সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা সব ধরণের চোরাচালান, জাদুকাটা নদীর বালু মহালসহ বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত থেকে সিলেট-সুনামগঞ্জ তাহিরপুর সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন চেয়ারম্যান ইউনুছ আলী। বাদী অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সিলেট নগরীর দরগাগেইট এলাকায় ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও গুলিবর্ষণের ঘটনার সময়ও সরাসরি জড়িত ছিলেন ইউনুছ আলী।
মঙ্গলবার রাতে তাহিরপুরের সাদেরখলা গ্রামের প্রয়াত হাজি আব্দুর রহমানের ছেলে ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলীর সহোদর কয়লা চুনাপাথর আমদানিকারক জিল্লুর অভিযোগ করে বলেন, গ্রামের বাড়ি থেকে সিলেটে যাবার পথে দক্ষিণ বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার ক্উাকান্দি বাজার থেকে তাহিরপুর থানা পুলিশ আমার বড় ভাই ইউপি চেয়ারম্যান ইউনুছ আলীকে গ্রেফতার করেছে।