বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুনামগঞ্জে গাছ থেকে আম না পাড়ায় হত্যা; অপমৃত্যুর নাটক, পিবিআই কর্তৃক রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ০২

 

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউরা গ্রামে গাছ থেকে আম না পাড়ায় ১২ বছর বয়সী কিশোর রিংকন বিশ্বাসকে হত্যার ঘটনায় জড়িত মাছের খামারের দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই সিলেট জেলা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—পাবেল ওরফে তাবেল (২১) ও জহিরুল ইসলাম (২৩)। উভয়েই বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

২০২৪ সালের ২২ জুন লুলু মেম্বারের মাছের খামারে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় কিশোর রিংকন বিশ্বাসের। প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাবেক মেম্বার লুলু মিয়া গং এর চাপে নিহতের পিতা শ্রিকান্ত বিশ্বাস সেদিনই ছেলেকে মুখাগ্নি শেষে সমাধিস্থ করেন। ভিকটিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা স্বত্ত্বেও সাবেক মেম্বার ও তার পক্ষের লোকজনের প্রভাবে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমের মৃত দেহের ছবি উত্তোলন করতে এবং থানায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘটনার ০২ দিন পর ২৪ জুন ২০২৪ খ্রি. তারিখ নিহতের পিতা শ্রিকান্ত বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। থানা পুলিশ গত ২৭ জুন ২০২৪ খ্রিঃ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর হতে নিহতের লাশ উত্তোলন সহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই ঘটনায় গত ১৬ জুলাই ২০২৪ খ্রি. তারিখ নিহতের মা বাসন্তি রানী বাদী হয়ে লুলু মেম্বারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা নং-১৪২/২৪, তারিখঃ ১৬/০৭/২৪, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানাকে উক্ত সিআর মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. তারিখ থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলা তদন্ত শেষে ভিকটিম রিংকন বিশ্বাস গাছে উঠে আম পাড়তে গিয়ে পা ফসকে গাছের নিচে পুকুরে থাকা গোবরের মধ্যে মাথা নিচের দিকে পড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে এবং সিআর মামলা নং-১৪২/২৪, তারিখঃ ১৬/০৭/২৪, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড মামলাটি তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। নিহতের মা বাসন্তি রানী থানা পুলিশের সিআর মামলায় দাখিলকৃতচূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নারাজির আবেদন দিলে গত ০৫ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখ বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানার মামলা নং-০৯ তারিখ-১২/১১/২০২৪ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন এবং এক মাসের মধেই মামলাটির তদন্ত শেষ করে গত ১২/১২/২০২৪ খ্রি. তারিখে থানা পুলিশ বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পুনরায় বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে গত ২৩/০৩/২০২৫ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার পিবিআই সিলেট জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পিবিআই সিলেট জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। এসআই মোঃ তারিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই ২০২৫ খ্রি. তারিখ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী ০১। পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং ২। এজাহারনামীয় আসামী জহিরুল ইসলাম (২৩) দ্বয়কে সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ রিমান্ডে আনেন।

পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদ্বয় জানায়, ঘটনার দিন দুপুর অনুমান ১২.৩৫ টার সময় লুলু মেম্বারের খামারের গোয়াল ঘরের পাশের আম গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য কর্মচারী রিংকন বিশ্বাসকে আসামীরা আম পাড়তে বললে গাছে বিদ্যুতের তার থাকায় রিংকন গাছে উঠতে রাজি হয় না। আসামীরা একাধিকবার বললেও রিংকন রাজি না হওয়ায় আসামীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রিংকনকে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে এবং খামারের গোয়ালের পাশে গোবরের ঢিবিতে রিংকন বিশ্বাসের মুখ ও মাথা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা উক্ত হত্যাকে গাছ থেকে পড়ে গোবরের পানিতে ডুবে দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু মর্মে প্রচার করে।

গত ১৯ জুলাই ২০২৫ খ্রি. তারিখ আসামী ১। পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং ২। এজাহারনামীয আসামী জহিরুল ইসলাম (২৩) দ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামীদ্বয় ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে এবং তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্ধুদের সহযোগিতায় পুলিশ কন্সষ্টেবলের সরকারি কোয়ার্টারে গৃহকর্মীকে ধর্ষণ!

সুনামগঞ্জে গাছ থেকে আম না পাড়ায় হত্যা; অপমৃত্যুর নাটক, পিবিআই কর্তৃক রহস্য উদঘাটন, গ্রেপ্তার ০২

প্রকাশের সময় : ০৪:০৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

 

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউরা গ্রামে গাছ থেকে আম না পাড়ায় ১২ বছর বয়সী কিশোর রিংকন বিশ্বাসকে হত্যার ঘটনায় জড়িত মাছের খামারের দুই কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই সিলেট জেলা। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—পাবেল ওরফে তাবেল (২১) ও জহিরুল ইসলাম (২৩)। উভয়েই বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে।

২০২৪ সালের ২২ জুন লুলু মেম্বারের মাছের খামারে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় কিশোর রিংকন বিশ্বাসের। প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ সমর্থিত সাবেক মেম্বার লুলু মিয়া গং এর চাপে নিহতের পিতা শ্রিকান্ত বিশ্বাস সেদিনই ছেলেকে মুখাগ্নি শেষে সমাধিস্থ করেন। ভিকটিমের শরীরে আঘাতের চিহ্ন থাকা স্বত্ত্বেও সাবেক মেম্বার ও তার পক্ষের লোকজনের প্রভাবে ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমের মৃত দেহের ছবি উত্তোলন করতে এবং থানায় যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হন। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে ঘটনার ০২ দিন পর ২৪ জুন ২০২৪ খ্রি. তারিখ নিহতের পিতা শ্রিকান্ত বিশ্বাসের লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে জগন্নাথপুর থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু হয়। থানা পুলিশ গত ২৭ জুন ২০২৪ খ্রিঃ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কবর হতে নিহতের লাশ উত্তোলন সহ সমস্ত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই ঘটনায় গত ১৬ জুলাই ২০২৪ খ্রি. তারিখ নিহতের মা বাসন্তি রানী বাদী হয়ে লুলু মেম্বারসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে সিআর মামলা নং-১৪২/২৪, তারিখঃ ১৬/০৭/২৪, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড দায়ের করেন। বিজ্ঞ আদালত অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানাকে উক্ত সিআর মামলাটি তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রাপ্তির পর গত ১৫ অক্টোবর ২০২৪ খ্রি. তারিখ থানা পুলিশ অপমৃত্যু মামলা তদন্ত শেষে ভিকটিম রিংকন বিশ্বাস গাছে উঠে আম পাড়তে গিয়ে পা ফসকে গাছের নিচে পুকুরে থাকা গোবরের মধ্যে মাথা নিচের দিকে পড়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণ করেছে মর্মে পুলিশ রিপোর্ট দাখিল করে এবং সিআর মামলা নং-১৪২/২৪, তারিখঃ ১৬/০৭/২৪, ধারাঃ ৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড মামলাটি তদন্ত শেষে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। নিহতের মা বাসন্তি রানী থানা পুলিশের সিআর মামলায় দাখিলকৃতচূড়ান্ত রিপোর্টের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে নারাজির আবেদন দিলে গত ০৫ নভেম্বর ২০২৪ খ্রি. তারিখ বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে জগন্নাথপুর থানার অফিসার ইনচার্জ জগন্নাথপুর থানার মামলা নং-০৯ তারিখ-১২/১১/২০২৪ খ্রিঃ ধারা-৩০২/২০১/৩৪ পেনাল কোড রুজু করেন এবং এক মাসের মধেই মামলাটির তদন্ত শেষ করে গত ১২/১২/২০২৪ খ্রি. তারিখে থানা পুলিশ বিজ্ঞ আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পুনরায় বাদীর নারাজির প্রেক্ষিতে গত ২৩/০৩/২০২৫ খ্রিঃ বিজ্ঞ আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য পুলিশ সুপার পিবিআই সিলেট জেলাকে নির্দেশ প্রদান করেন। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশে পিবিআই সিলেট জেলা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করেন। এসআই মোঃ তারিকুল ইসলাম মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেন এবং তথ্য প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ জুলাই ২০২৫ খ্রি. তারিখ ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে আসামী ০১। পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং ২। এজাহারনামীয় আসামী জহিরুল ইসলাম (২৩) দ্বয়কে সিলেট কদমতলী বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে গ্রেফতার করেন। পুলিশ রিমান্ডে আনেন।

পিবিআই এর জিজ্ঞাসাবাদে আসামীদ্বয় জানায়, ঘটনার দিন দুপুর অনুমান ১২.৩৫ টার সময় লুলু মেম্বারের খামারের গোয়াল ঘরের পাশের আম গাছ থেকে আম পাড়ার জন্য কর্মচারী রিংকন বিশ্বাসকে আসামীরা আম পাড়তে বললে গাছে বিদ্যুতের তার থাকায় রিংকন গাছে উঠতে রাজি হয় না। আসামীরা একাধিকবার বললেও রিংকন রাজি না হওয়ায় আসামীরা ক্ষুব্ধ হয়ে রিংকনকে এলোপাথারীভাবে মারপিট করে এবং খামারের গোয়ালের পাশে গোবরের ঢিবিতে রিংকন বিশ্বাসের মুখ ও মাথা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরবর্তীতে তারা উক্ত হত্যাকে গাছ থেকে পড়ে গোবরের পানিতে ডুবে দূর্ঘটনাজনিত মৃত্যু মর্মে প্রচার করে।

গত ১৯ জুলাই ২০২৫ খ্রি. তারিখ আসামী ১। পাবেল প্রকাশ তাবেল (২১) এবং ২। এজাহারনামীয আসামী জহিরুল ইসলাম (২৩) দ্বয়কে বিজ্ঞ আদালতে সোপর্দ করা হলে আসামীদ্বয় ফৌঃ কাঃ বিঃ এর ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।

মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে এবং তদন্ত কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।