Sylhet ০৭:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৪ মে ২০২৫, ২১ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জগন্নাথপুরে তিনটি সেতু নিয়ে চরম দুর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে তিনটি সেতু নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছেন কয়েক লাখ মানুষ । উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীতে ওই তিনটি সেতু রয়েছে। জগন্নাথপুরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত সেতুগুলোতে চলাচলে প্রতিনিয়ত জনভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নলজুরের প্রধান সেতু খাদ্যগুদামের পুরোনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণকাজ চলছে। নদীর আরেকটি দেবে যাওয়া ডাক বাংলোর ঝূর্কিপূণ সেতুটি অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে হুমকির মুখে। যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এটি সরো হওয়াতে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

অপরদিকে খাদ্যগুদামের পাশে বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে একমুখি যান চলাচল করছে। এ সেতুর সংযোগ সড়কের করুণ অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে নির্মাণাধীন নতুন সেতুর পাশে চলাচলের জন্য তৈরী করা বাঁশের সাঁকোটিও ভেঙে পড়ছে। এটি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় নাগরিক জাকির হেসেন বলেন, তিন সেতুর ‘ভাঙা গড়ায়’ আমরা অতিষ্ঠ। প্রশাসনের চোখের সামনে দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই।
শামীম আহমদ নামের আরেক নাগরিক বলেন, উপজেলা সদরকে পৌরসভার রূপান্তরিত করার পর আশপাশ উপজেলায় লোকজনের সমাগম বেড়েছে জগন্নাথপুরে। শহরের একদম প্রাণকেন্দ্র দেড়, দুই বছর ধরে সেতুগুলোর করুণাদশায় কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভোগে ভুগচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্র জানায়,১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্য গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। বিগত সরকারের আমলে পুরোনো এ সেতুটি ভেঙে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে ২৩ সালের ২৬ মার্চ আর্চ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকে নির্মাণ কাজ শুর হয়।
কাজটি পান কিশোরগঞ্জের ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ। গত বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৬০ ভাগ কাজ এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, টিকাকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজ চলছে ধীরগতিতে।
এ সেতুর পাশে ওই সময় বিকল্প হিসেবে হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি সেতু তৈরী করা হয়। সেতুটি তৈরির সময় স্থানীয় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটি ডুবে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আরও উঁচু করার দাবি জানান। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ আমলে না নেওয়ায় ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানিতে সেতুটি বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায়। যে কারণে বষায় তিন, চার মাস যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় জনসাধারণকে। পানি কমে গেলে যান চলাচল করে।
অপরদিকে ১৯৮৮ সালে এলাকাবাসি ও ব্যবসায়ীদের টাকায় একই নদীর ওপর ডাক বাংলো সেতুর নির্মাণ শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে এলজিইডি অধিদপ্তরের মাধ্যমে কাজ শেষ হয়।
২০২২ সালে ১৭ মার্চ নদী খনন কালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতু দেবে যাওয়ায় ১১ মাস যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে এলজিইডি ও জগন্নাথপুর পৌরসভা উদ্যোগে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করা হয়। বর্ষাকালে বিকল্প সেতু পানিতে তলিয়ে গেলে তখন একমাত্র ভরসা এ সেতু। এ সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এবং নদীতে পানি বাড়লে বন্ধ হয়ে যায় সেতু দিয়ে যান চলাচল। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

নির্মানাধীন সেতুর কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাইট ম্যানেজার সাইফুল আলম জানান, নদীতে পানি থাকায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বর্তমানে কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। অচিরেই শেষ হবে কাজ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোরবার হোসেন
জানান, নতুন সেতুর কাজ শেষ হলে জনদুর্ভোগ কমে যাবে। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারিতে সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে।

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

জগন্নাথপুরে তিনটি সেতু নিয়ে চরম দুর্ভোগে কয়েক লাখ মানুষ

প্রকাশের সময় : ০২:০৭:৫২ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুরে তিনটি সেতু নিয়ে চরম দুর্ভোগে আছেন কয়েক লাখ মানুষ । উপজেলা সদরের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নলজুর নদীতে ওই তিনটি সেতু রয়েছে। জগন্নাথপুরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত সেতুগুলোতে চলাচলে প্রতিনিয়ত জনভোগান্তির শিকার হচ্ছেন জনসাধারণ।
সরেজমিনে দেখা যায়, দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে নলজুরের প্রধান সেতু খাদ্যগুদামের পুরোনো সেতুটি ভেঙে নতুন সেতু নির্মাণকাজ চলছে। নদীর আরেকটি দেবে যাওয়া ডাক বাংলোর ঝূর্কিপূণ সেতুটি অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে হুমকির মুখে। যে কোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। এটি সরো হওয়াতে প্রতিনিয়ত তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

অপরদিকে খাদ্যগুদামের পাশে বিকল্প বেইলি সেতু দিয়ে একমুখি যান চলাচল করছে। এ সেতুর সংযোগ সড়কের করুণ অবস্থা বিরাজ করছে।
এদিকে নির্মাণাধীন নতুন সেতুর পাশে চলাচলের জন্য তৈরী করা বাঁশের সাঁকোটিও ভেঙে পড়ছে। এটি দিয়ে পায়ে হেঁটে চলা কষ্টকর হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় নাগরিক জাকির হেসেন বলেন, তিন সেতুর ‘ভাঙা গড়ায়’ আমরা অতিষ্ঠ। প্রশাসনের চোখের সামনে দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও কার্যকরী কোন পদক্ষেপ নেই।
শামীম আহমদ নামের আরেক নাগরিক বলেন, উপজেলা সদরকে পৌরসভার রূপান্তরিত করার পর আশপাশ উপজেলায় লোকজনের সমাগম বেড়েছে জগন্নাথপুরে। শহরের একদম প্রাণকেন্দ্র দেড়, দুই বছর ধরে সেতুগুলোর করুণাদশায় কয়েক লাখ মানুষ দুর্ভোগে ভুগচ্ছেন।

এলাকাবাসী ও এলজিইডি সূত্র জানায়,১৯৮৭ সালে নলজুর নদীর ওপর ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে খাদ্য গুদামের সামনে একটি সেতু নির্মাণ করা হয়। বিগত সরকারের আমলে পুরোনো এ সেতুটি ভেঙে ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর হাতিরঝিলের আদলে ২৩ সালের ২৬ মার্চ আর্চ সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর থেকে নির্মাণ কাজ শুর হয়।
কাজটি পান কিশোরগঞ্জের ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স ভাটি বাংলা এন্টারপ্রাইজ। গত বছরের এপ্রিল মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৬০ ভাগ কাজ এখনও শেষ হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, টিকাকারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজ চলছে ধীরগতিতে।
এ সেতুর পাশে ওই সময় বিকল্প হিসেবে হেলিপ্যাড এলাকায় একটি বেইলি সেতু তৈরী করা হয়। সেতুটি তৈরির সময় স্থানীয় এলাকার লোকজন বর্ষায় এটি ডুবে যাবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে আরও উঁচু করার দাবি জানান। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ আমলে না নেওয়ায় ভারী বর্ষণ ও ঢলের পানিতে সেতুটি বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যায়। যে কারণে বষায় তিন, চার মাস যান চলাচল বন্ধ থাকে। ফলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয় জনসাধারণকে। পানি কমে গেলে যান চলাচল করে।
অপরদিকে ১৯৮৮ সালে এলাকাবাসি ও ব্যবসায়ীদের টাকায় একই নদীর ওপর ডাক বাংলো সেতুর নির্মাণ শুরু হলেও ১৯৯৬ সালে এলজিইডি অধিদপ্তরের মাধ্যমে কাজ শেষ হয়।
২০২২ সালে ১৭ মার্চ নদী খনন কালে সেতুর পিলারের কাছ থেকে খনন যন্ত্র দিয়ে মাটি কাটার সময় সেতু দেবে যাওয়ায় ১১ মাস যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে এলজিইডি ও জগন্নাথপুর পৌরসভা উদ্যোগে সেতুর ক্ষতিগ্রস্ত অংশে স্টিলের পাটাতন বসিয়ে সেতুটি চালু করা হয়। বর্ষাকালে বিকল্প সেতু পানিতে তলিয়ে গেলে তখন একমাত্র ভরসা এ সেতু। এ সময় অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এবং নদীতে পানি বাড়লে বন্ধ হয়ে যায় সেতু দিয়ে যান চলাচল। ফলে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

নির্মানাধীন সেতুর কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সাইট ম্যানেজার সাইফুল আলম জানান, নদীতে পানি থাকায় কাজে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। বর্তমানে কাজ দ্রুত গতিতে চলছে। অচিরেই শেষ হবে কাজ।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের জগন্নাথপুর উপজেলা প্রকৌশলী সোরবার হোসেন
জানান, নতুন সেতুর কাজ শেষ হলে জনদুর্ভোগ কমে যাবে। আমরা আশা করছি, ফেব্রুয়ারিতে সেতুর কাজ সম্পন্ন হবে।