শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ৮ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় তদন্ত কমিটির ১০ সুপারিশ

  • সিলেট ভিশন ::
  • প্রকাশের সময় : ০৪:২৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

 

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশের পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে লুটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের কাছে এ প্রতিবেদন দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ। প্রতিবেদনে কী আছে, তা জানতে পদ্মাসন সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পদ্মাসন সিংহ বলেন, ‘ডিসি স্যারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে আর কিছুই বলা যাবে না।’

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর ও বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে ৮টি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের ৮টি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতের বেলা আড়ালে মানুষ অবৈধভাবে পাথর তুলতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা এক বছর দেদার পাথর লুটপাট চলে।

সর্বশেষ পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে ৮০ শতাংশ পাথর লুট করে নেওয়া হয়। বিষয়টি প্রচার হলে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসন ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক হন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ। এতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (গত সোমবার তাঁকে বদলি করা হয়েছে) আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. আফজারুল ইসলামকে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথর লুটের কারণ, কারা কারা সম্পৃক্ত, সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ তদন্ত কমিটি তাঁদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্য ঘেঁটে তাঁরা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।

এদিকে আজ দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। এ সময় তিনি বলেন, সাদাপাথরে পাথর লুটকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে। কাজ চলছে সতর্কতার সঙ্গে, যাতে প্রকৃত দোষীদের নাম তালিকায় আসে এবং নির্দোষ মানুষ হয়রানির শিকার না হন। তালিকা তৈরির পর তা প্রকাশ করা হবে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে কাজ চলছে।

গত ৯ জুলাই বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তাঁর বক্তব্যে পাথর লুটপাটকারীরা উৎসাহিত হয়েছে কি না, প্রশ্নের জবাবে খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, ‘সেদিন আমরা ইজারা নিয়ে কথা বলেছি। পাথর চুরি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পাথরচোরদের উৎসাহিত করার মতো কিছু আমি বলিনি। তেমন কিছু কেউ বললে বা ছড়ালে সেটা ভুল মেসেজ।’

এদিকে লুটের পাথর উদ্ধারে আজও অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্স। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৯৫ হাজার ঘনফুট ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় দুই হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে। তবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অভিযান পরিচালিত হলেও কী পরিমাণ পাথর উদ্ধার হয়েছে, তা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন জানাতে পারেনি।

#দৈনিক প্রথম আলো

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Sylhet Vision

ছাতকের পরিবেশ রক্ষায় কঠোর অভিযান, ড্রেজার মেশিন ও বাল্কহেড জব্দ

সিলেটে পাথর লুটের ঘটনায় তদন্ত কমিটির ১০ সুপারিশ

প্রকাশের সময় : ০৪:২৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫

 

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্রে পাথর লুটের ঘটনায় জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে ১০টি সুপারিশের পাশাপাশি কিছু পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে লুটের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

আজ বুধবার বেলা দেড়টার দিকে বিদায়ী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের কাছে এ প্রতিবেদন দেন তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ। প্রতিবেদনে কী আছে, তা জানতে পদ্মাসন সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

পদ্মাসন সিংহ বলেন, ‘ডিসি স্যারের কাছে প্রতিবেদন জমা দিয়েছি।’ পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে আর কিছুই বলা যাবে না।’

সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর ও বালু উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) আছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে আছে ৮টি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি, উৎমাছড়াসহ আরও ১০টি জায়গায় পাথর আছে। সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে এসব পাথর আসে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের ৮টি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের পর আর পাথর কোয়ারি ইজারা দেওয়া হয়নি।

সিলেটের ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক দলের নেতারা সব সময় পাথর উত্তোলনের পক্ষে জোরালো অবস্থান নেন। বিগত পাঁচ বছরে তাঁরা নানাভাবে কোয়ারি ইজারা আবার চালুর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সরকার অনুমতি দেয়নি। এ অবস্থায় রাতের বেলা আড়ালে মানুষ অবৈধভাবে পাথর তুলতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর টানা এক বছর দেদার পাথর লুটপাট চলে।

সর্বশেষ পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর থেকে ৮০ শতাংশ পাথর লুট করে নেওয়া হয়। বিষয়টি প্রচার হলে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় ১২ আগস্ট জেলা প্রশাসন ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক হন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদ্মাসন সিংহ। এতে সদস্য হিসেবে রাখা হয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (গত সোমবার তাঁকে বদলি করা হয়েছে) আজিজুন্নাহার ও পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেটের সহকারী পরিচালক মো. আফজারুল ইসলামকে।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদাপাথর লুটের কারণ, কারা কারা সম্পৃক্ত, সুপারিশ ও পর্যবেক্ষণ তদন্ত কমিটি তাঁদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্য ঘেঁটে তাঁরা প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন।

এদিকে আজ দুপুরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে এক মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী। এ সময় তিনি বলেন, সাদাপাথরে পাথর লুটকারীদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি হচ্ছে। কাজ চলছে সতর্কতার সঙ্গে, যাতে প্রকৃত দোষীদের নাম তালিকায় আসে এবং নির্দোষ মানুষ হয়রানির শিকার না হন। তালিকা তৈরির পর তা প্রকাশ করা হবে। এ ব্যাপারে গোয়েন্দা বাহিনীসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে কাজ চলছে।

গত ৯ জুলাই বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সভায় তাঁর বক্তব্যে পাথর লুটপাটকারীরা উৎসাহিত হয়েছে কি না, প্রশ্নের জবাবে খান মো. রেজা-উন-নবী বলেন, ‘সেদিন আমরা ইজারা নিয়ে কথা বলেছি। পাথর চুরি নিয়ে কিছু বলা হয়নি। পাথরচোরদের উৎসাহিত করার মতো কিছু আমি বলিনি। তেমন কিছু কেউ বললে বা ছড়ালে সেটা ভুল মেসেজ।’

এদিকে লুটের পাথর উদ্ধারে আজও অভিযান চালিয়েছে যৌথ বাহিনী ও টাস্কফোর্স। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সদর উপজেলায় ৯৫ হাজার ঘনফুট ও গোয়াইনঘাট উপজেলায় দুই হাজার ঘনফুট পাথর উদ্ধার হয়েছে। তবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় অভিযান পরিচালিত হলেও কী পরিমাণ পাথর উদ্ধার হয়েছে, তা সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসন জানাতে পারেনি।

#দৈনিক প্রথম আলো